শনিবার , ২৬ আগস্ট ২০২৩
৬ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
  1. অপরাধ
  2. আইন-আদালত
  3. আজকের যশোর
  4. আন্তর্জাতিক
  5. খেলাধুলা
  6. গনমাধ‍্যেম
  7. চাকরি
  8. দেশজুড়ে
  9. পোর্ট থানা বেনাপোল
  10. ফিচার
  11. বাংলাদেশ
  12. বিনোদন
  13. মডেল থানা যশোর
  14. রাজনীতি
  15. শার্শা থানা

যশোর জেনারেল হাসপাতাল

প্রতিবেদক
Face The Jashore
আগস্ট ২৬, ২০২৩ ৩:১৬ অপরাহ্ণ

চিকিৎসক-নার্স সংকটে সেবায় হ-য-ব-র-ল

যশোর জেনারেল হাসপাতালে রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সরা। নির্ধারিত শয্যার বাইরে মেঝে, বারান্দা, সিঁড়ির পাশে এমনকি টয়লেটের সামনেও রোগী রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। রোগীর তুলনায় চিকিৎসক, নার্স ও ক্লিনারের পরিমাণ কম হওয়ায় হাসপাতালটির চিকিৎসাসেবায় বিরাজ করছে হ-য-ব-র-ল অবস্থা।

কর্তৃপক্ষের দাবি, লোকবল বাড়ানোর চাহিদাপত্র পাঠালেও কোনো ফল হয়নি। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে নতুন পদ সৃষ্টি অথবা যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণ জরুরি।

যশোরের মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জ থেকে কোমরে ব্যথা নিয়ে চিকিৎসা নিতে জেনারেল হাসপাতালে এসেছেন রিতা রায়। মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হতে পারলেও মেলেনি শয্যা। ওয়ার্ডের মেঝেতেও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। এভাবে পিলারের সঙ্গে হেলান দিয়ে বসে চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি। কেবল এ ওয়ার্ডই নয়, পুরুষ মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি, শিশুসহ হাসপাতালের ১৫টি ওয়ার্ডেরই একই চিত্র। বর্তমানে এসব ওয়ার্ডে রোগীর চাপে পা ফেলার জায়গা নেই। বেডের পাশেই মেঝেতে রোগী থাকায় বিছানা থেকে নামতেও পারেন না রোগী ও তার স্বজনরা। এ ছাড়াও অনেক রোগীর ঠাঁই হয়েছে বারান্দায়। আবার অনেকে সেখানেও জায়গা না পেয়ে ঠাঁই নিয়েছেন সিঁড়ির পাশে ও টয়লেটের সামনে। এ অবস্থায় নোংরা পরিবেশে যেমন চরম দুর্ভোগে রোগী তেমনি সঠিক চিকিৎসাও পাচ্ছেন না তারা।

রিতা রায়ের মা পল্লবী রায় বলেন, ‘হাসপাতালে রোগীর এত চাপ যে সিট পাইনি। বাধ্য হয়ে মেয়েকে নিয়ে বসে আছি। চিকিৎসক এসে এখানেই দেখে গেছে। মেয়েটা কষ্ট সহ্য করতে না পেরে একপর্যায়ে মেঝেতেই শুয়ে পড়ে। এভাবে চিকিৎসা নেয়া খুবই কষ্টকর।’

হালিমা বেগম নামে অপর এক রোগীর স্বজন জানান, ‘দুদিন হলো হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। এখনও সিট পাইনি। একজনের বেডের নিচে পা রাখার জায়গায় কোনোমতে বিছানা করে রোগীকে শোয়ানো হয়েছে। এমনও রোগী আছে যারা ৭-৮ দিন হয়ে এসেছে, কিন্তু সিট পায়নি। আমরা ছিট পাব কীভাবে?’


বারান্দায় চিকিৎসা নেয়া সালমা বেগম জানান, বারান্দায় বিছানার পাশ দিয়ে অসংখ্য মানুষ হাঁটাচলা করে। কত জীবাণু এর ভেতরে, কীভাবে চিকিৎসা নেব? তা ছাড়া এখানে ফ্যান নেই। চিকিৎসা নিতে এসেও বেশ কষ্টে আছি।


রেশমা পারভীন নামে অপর এক নারী রোগী বলেন, ‘জায়গা না পাওয়ায় বাথরুমের সামনে আমাদের বিছানা করে দেয়া হয়েছে। আমার মতো অনেক নারী এখানে এভাবেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। বাথরুমের দুর্গন্ধ, সেই সঙ্গে জীবাণুর ভয়ে অতিষ্ঠ আমরা।’


সাব্বির হোসেন নামে অপর একজন বলেন, ‘মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে রোগী এই হাসপাতালে মেডিসিন বিভাগে রেফার্ড করা হয়েছে উন্নত চিকিৎসার জন্য। এখানে আসার পর দেখি চারপাশে রোগী আর রোগী। একসঙ্গে এত রোগীর চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসক ও নার্সরা হিমশিম খাচ্ছে। রোগীর চাপে তারা ঠিকমতো কথা বলতে পারছেন না।’


আরেক রোগীর স্বজন আব্দুল জলিল জানান, রোগীর তুলনায় শয্যা ও চিকিৎসক কম। ফলে সব রোগীকে ঠিকমতো চিকিৎসা দিতে পারছেন না। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে শয্যা ও চিকিৎসক সেবিকা বাড়ানোর তাগিদ দেন তিনি।


চিকিৎসক ও নার্সদের দাবি ২৫০ শয্যার হাসপাতালে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৬০০ রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সে তুলনায় চিকিৎসক ও সেবিকা কম হওয়ায় রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।


চিকিৎসক খালেদ শামস বলেন, প্রচুর পরিমাণে রোগী আসছে প্রতিদিন। গড়ে সাড়ে ৬০০ ভর্তি রোগীকে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। এ হাসপাতালটি ২৫০ শয্যার। যে পরিমাণ চিকিৎসক আছে তা দিয়ে রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

আরেক চিকিৎসক ডা. সাবিক হাসান সিফাত জানান, ‘মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে বেডের সংখ্যা ৩৮টি। কিন্তু রোগী ভর্তি আছে ৭৯ জন। আজ দিনভর আরও অনেক রোগী ভর্তি হবে। সীমিত সংখ্যক জনবল দিয়ে আমরা আমাদের সর্বোচ্চটা দেয়ার চেষ্টা করছি।’

খালেদা আক্তার নামে এক নার্স বলেন, ‘এক একটি ওয়ার্ডে তিন শিফটে ভাগ করে দায়িত্ব পালন করেন সেবিকারা। সকালের শিফটে চারজন এবং দুপুর ও রাতের শিফটে তিনজন করে দায়িত্ব পালন করেন। বিপুলসংখ্যক রোগীকে সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ওষুধ দেয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। এতে রোগীরা মনঃক্ষুণ্ন হন।’

এদিকে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন-অর-রশীদ বলেন, লোকবল বাড়ানোর চাহিদাপত্র পাঠালেও কোনো ফল হয়নি। কারণ, ২৫০ শয্যার হাসপাতালে চিকিৎসক ও নার্সদের পদ বাড়াতে হলে নীতিমালায় পরিবর্তন আনতে হবে। ফলে এ অবস্থা থেকে উত্তরণে নতুন পদ সৃষ্টি করা সম্ভব না হলে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলে রোগীর চাপ সামাল দেয়া সম্ভব হবে।

হাসপাতালের দেয়া তথ্যমতে, জুলাই মাসে এ হাসপাতালে আন্তঃ ও বহির্বিভাগ থেকে ৭২ হাজার রোগী চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন।

সর্বশেষ - আজকের যশোর